শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ অপরাহ্ন

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সঠিক পথেই দেশ

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সঠিক পথেই দেশ

স্বদেশ ডেস্ক:

বৈশ্বিক মহামারী বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। দেশে দেশে এই সংকট তীব্র হচ্ছে। বেশির ভাগ দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) সংকোচন হবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পূর্বাভাস দিয়েছে। করোনা-খড়গে কর্মহীন হয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। এমন দুর্গতির মধ্যেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশার কথাই শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আভাসও দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, করোনাকালীন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সঠিক পথেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ।

দেশের অর্থনীতিতে ২০২০ সালের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা। তার এ দূরদর্শী পদক্ষেপ দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এ ছাড়া মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এ বছরই আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ঠিক জায়গায় আছে, ভালো অবস্থানে আছে। যেটা কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। দেখেন সারাবিশ্বে

কোথাও প্রবৃদ্ধি পাবেন না। আমরা এখনো সব সূচকে প্রবৃদ্ধি রক্ষা করছি। সুতরাং এটা আল্লাহর অশেষ রহমত এ দেশের মানুষের প্রতি। আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ জানান, ‘মহামারীর প্রভাব থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেরিয়ে আসছে। স্বাস্থ্য ও মহামারী ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য চাপ থাকা সত্ত্বেও সরকার গরিব ও দুস্থদের জন্য মৌলিক সেবা নিশ্চিত করে উপযুক্ত অর্থনৈতিক উদ্দীপনা এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাসহ অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উদ্দীপনা ও সামাজিক সুরক্ষায় বৈদেশিক তহবিল নিশ্চিত করাসহ সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ফলেই এ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে। প্রথম দিকেই ভ্যাকসিন হাতে পেলে এবং মহামারী ব্যবস্থাপনার ওপর আরও জোর দিলে, তা এই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আরও সহায়ক হবে। এডিবি সরকারকে আরও সহায়তা দেওয়ার জন্য কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান  বলেন, আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দিচ্ছে এতে বলা যায়, দেশের অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় আছে। তা ছাড়া পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সঠিক পথেই আছে।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ কর্মী দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তার পরও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। যদিও এ সময় নতুন করে ১০ হাজারের বেশি কর্মীকে বিভিন্ন দেশে পাঠানো সম্ভব হয়েছে।

এক দশকব্যাপী ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৫ দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। উল্লিখিত সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির  লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। এর বিপরীতে ওই অর্থবছরে অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ (সাময়িক হিসাব)। এতে আশাবাদের জায়গা হলো, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম অর্জিত হলেও এর ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি সামাজিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন সূচকেও সাধিত হয়েছে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত, দারিদ্র্য কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি সম্পদ ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত, বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ ঋণ ধারণক্ষমতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে সরকার। মহামারীর প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী লকডাউন ও অর্থনৈতিক স্থবিরতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এ সংকট মোকাবিলা ও অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হয়। যা দিয়ে ২১ প্যাকেজে প্রণোদনা দেওয়া হয়। প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর কারণে বাংলাদেশ কোভিড ১৯-এর অর্থনৈতিক অভিঘাত বেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছে।

বছরজুড়েই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রধান নির্দেশক মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, বাজেট ঘাটতি এবং সরকারি ঋণ বা জিডিপি অনুপাতের অবস্থান সন্তোষজনক ছিল। মূল্যস্ফীতি ২০০৮-০৯ অর্থবছরের ৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ (১২ মাসের গড়) হয়েছে। বাজেট ঘাটতি প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে সীমিত ছিল, যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনার প্রভাবে এ ঘাটতি সামান্য বেশি, ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ হয়েছে।

আমদানি ব্যয় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২২ হাজার ৫০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৯ হাজার ৯১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। তবে কোভিড ১৯-এর প্রভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ কমে তা ৫৪ হাজার ৭৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি আয় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৫,৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে ৪০,৫৩৫ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। কিন্তু  করোনা ভাইরাসের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ কমে তা ৩৩,৬৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রবাসী আয় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৯,৬৮৯ ডলার থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮,২০৫ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। অন্যদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ।

এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের মধ্যেও রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আদায় বেড়েছে দুই হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের এ প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।  গত পাঁচ মাসে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৮৭ হাজার ৯২ কোটি টাকা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে আদায় করা রাজস্বের তুলনায় ২ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছর একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877